বরেণ্য আলেমে দ্বীন, আল্লামা মনির উদ্দিন ( রহ:) এর ইন্তেকালের মধ্য দিয়ে একটি শতাব্দীর যবনিকা ঘটল। রয়ে গেল ঘটনা পরম্পরা, একরাশ অম্লমধুর সুখস্মৃতি যন্ত্রণাদায়ক বৈরিতা যার রেশ চলবে অনেক দিন। ইসলামী সংস্কৃতির ক্রমবিকাশ, বিদয়াত ও শিরকমুক্ত সমাজ গঠন, আত্মশুদ্ধি ও ইলমি শিক্ষার উন্নয়নে তার অসামান্য অবদান ইতিহাসে সোনালি অক্ষরে লেখা থাকবে। তিনার শিক্ষা জীবন নিজ এলাকাতেই শুরু করেন এবং অনেক জায়গা থেকে ইলমে অহীর জ্ঞান আহরণ করে পরিশেষে ময়মনসিংহ কাতলাসেন মাদরাসা থেকে হাদিসের উপর (কামিল) সর্বোচ্চ ডিগ্রী নেন। তিনি আমরণ ইলমে অহীর জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে ছুটে চলেছেন অবিরাম। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে আরবী প্রভাষক, ইমাম, খতিব ও দায়ী ইলাল্লাহ ছিলেন। এই বয়োবৃদ্ধ আলেম প্রায় ১০৫ বেঁচে ছিলেন।
ব্যক্তি জীবন আমার সব চাইতে বড় পাওয়া হলো আমি এই মহান ওলীর স্নেহধন্য হয়েছি অনেকবার। যখনই দেখা হতো মুছকি হেসে মুসাফাহার জন্য হাত বাড়িয়ে দিতেন। পড়াশুনার খোঁজখবর নিতেন এবং নসিহত করতেন। হুজুরের সাথে যখনই দেখা হতো, মাথার টুপি টা খুলে বলতাম, ‘হুজুর মাথায় একটু ফুক দিয়ে দেন’ মুছকি হেসে বিড়বিড় করে কি যেনো পড়ে মাথায় ফুক দিতেন আর পিঠে হাত ভুলিয়ে দিতেন। একবার এক মাহফিলে হুজুর আমার ডান পাশে বসা ছিলেন আর আমি অধম, নালায়েক উনার পাশে (মঞ্চে) বসে বয়ান করছিলাম, ভয়ে বুকটা ধুকধুক করছিলো কোথায় যেনো ভুল হয়ে যায়। অবশেষে ভয় নিয়েই প্রায় ২৬ মিনিট কুরআনের মু’যেজার উপর কথা বলেছিলাম।
বয়ান শেষ করার পর তিনি অত্যন্ত খুশি হলেন আর দোয়া করলেন। তিনি রায়পাশা ঈদগাহ (হাফিজিয়া মাদ্রাসার) মাঠের সাবেক ইমাম ছিলেন। আমার দেখা এতো সহজ সরল মুত্তাকী, পরহেজগার মানুষ বর্তমানে বিরল। বড় মাপের আলেম হওয়া সত্ত্বেও খুবই সাধারণ জীবন যাপন করতেন। তিনি দুনিয়া থেকে পরকাল কেই বেশি প্রাধান্য দিতেন।
আমি বিশ্বাস করি মরহুম মাওলানা মনির উদ্দিন (রহ:) হুজুর মা. জি. আ. তিনি একজন হক্কানী আলেম ও আল্লাহর খাছ বান্দা ছিলেন। তিনি বাতিলের বিরুদ্ধে হুঙ্কার দিয়েছেন, জীবনের প্রায় অনেক টা সময় জাহাঙ্গীরপুর সিনিয়র আলিম মাদরাসার (আরবি) প্রভাষকের মহান দায়িত্বে অধিষ্ঠিত ছিলেন। আমরণ এই বয়োবৃদ্ধ আলেম ইসলামের সুমহান বাণী ছড়িয়ে গেছেন। সারা পৃথিবীতে ইলমে অহীর জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে মৃত্যুর আগে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন ‘ মাওলানা বাড়ী মনিরুল উলূম হাফিজিয়া কওমী মহিলা মাদরাসা।
মহান ব্যাক্তিরা মৃত্যুর পড়ে আরো মহান হন তাঁদের নিজ কর্মের গুনে। দাঁত থাকতে কখনোই আমরা যেমন দাঁতের মর্ম বুঝিনা তেমনি মহান ব্যাক্তিদেরকে জীবিত থাকতে আমরা কখনোই মুল্যায়ন করতে পারিনা। এটা ইনসানদের একটি দুর্বলতা। আজ হয়ত আমরা বুঝবো যে কি মুরব্বি হারালাম আমরা। আমরা কেহই ভুলের উর্ধে নই, জীবনের পরতে পরতে আমাদের ভুল লেগেই আছে। আল্লামা মনির উদ্দিন সাহেব হুজুর মা. জি. আ. জীবনের প্রতিটি মুহুর্তই ইসলামের কল্যানে ব্যায় করেছেন, আমার মতো নালায়েক বান্দার আল্লামা মনির উদ্দিন সাহেব (হাফি:) সাহেব হুজুর মা. জি. আ. সঠিক মুল্যায়ন করা অপরিণামদর্শীতার শামীল হবে। তবে এক বাক্যে বলবো হুজুর ছিলেন মানবতার হুজুর, হুজুর ছিলেন জনতার হুজুর, হুজুর ছিলেন বাতিলের আতংক,
তিনি নি:স্বার্থ ভাবে অসংখ্য মানুষের অন্তরে জায়গা করে নিয়েছেন।
আল্লাহপাক মহান অলিকে সম্মানীত করে দুনিয়া থেকে নিয়ে গেছেন। আমরা হয়তো তার যথাযথ মুল্যায়ন করতে পারিনি। মহান রব তুমি আমাদেরকে মাফ করে দিও।
হুজুরের পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা শোকাহত! শোকাহত ভক্তের কাছে একটিই অনুরোধ আর তা হচ্ছে হুজুরের প্রতিষ্ঠিত ‘মাওলানা বাড়ী মনিরুল উলূম হাফিজিয়া কওমী মহিলা মাদরাসা’ টার প্রতি সকলের সু-দৃষ্ট কামনা করছি।
এবং আমরা হুজুরের সঠিক আদর্শগুলো চর্চা করি ও জীবনকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য অর্পন করি।
লিখেছেন : হাফেজ রোমান হোসাইন, নান্দাইল, ময়মনসিংহ।